আধুনিক মুসলিম বিশ্বের বিনির্মাণ
পর্ব-৪
এই সাধারণ নিয়মের শুধুমাত্র ব্যতিক্রম আরব জাতীয়তাবাদ এবং ইসলামিজমের আদর্শ। ৬০ এর দশকে আরব জাতীয়তাবাদ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় রাজনৈতিক আদর্শ ছিল এবং তারপর থেকেই এটি একটি সাধারণ রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন হিসেবে গড়ে উঠেছে, যা আরব বিশ্বকে বিভক্ত করে ২২ টি রাজ্যে পরিণত করার বিষয়টি নিয়ে নৈতিকভাবে প্রশ্ন তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও এমনকি এই ক্ষেত্রেও, ঐক্যের এই শ্লোগান কয়েকটি সিম্বলিক একত্রীকরণ চুক্তি ব্যতীত (যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ইউনাইটেড আরব রিপাবলিক যা ১৯৫৮ থেকে ১৯৬১ পর্যন্ত মিশর ও সিরিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যাপারটি এবং আরব লীগ গঠন) সেগুলো ঔপনিবেশিক সীমানার বিভক্তিকে কার্যকরভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি। শুধু উত্তর ও দক্ষিণ ইয়েমেন সফলভাবে একতাবদ্ধ হয়েছে, কিন্তু তা ইসলামের নামে নয় বরং ইয়েমেনী জাতীয়তাবাদের নামে। এমনকি ইংল্যান্ড কর্তৃক খামখেয়ালীভাবে সৃষ্ট জর্ডান রাষ্ট্র যার প্রথম রাজা আমির আব্দুল্লাহকে নির্দিষ্ট অনুদান ও ছয়মাস সময় দেওয়া হয়েছিল পর্যবেক্ষণ করার জন্য যে এই ধারণাটি কাজ করে কিনা, সময়ের পরীক্ষায় সেটাও সফল হয়েছিলো। এছাড়াও আরব জাতীয়তাবাদ কোন ইসলামী মতাদর্শ নয় এবং এই অর্থে এটি বিভক্ত মুসলিম বিশ্বকে পরিবর্তন করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে না; বরং এটি বিভক্ত আরব বিশ্বের ব্যাপারে কাজ করে। ইসলামী আন্দোলনগুলোও জাতিগত পরিচয়ের উর্ধে উঠে সকল মুসলিমদের ঐক্যের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং জাতিরাষ্ট্রের পরিবর্তে উম্মাহ্র বাস্তবতাকে গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে, ইসলামী আন্দোলনগুলো মুসলিম বিশ্বের সীমানার বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখেই তাদের রাজনীতি পরিচালনা করেছে। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার ইসলামিক পার্টি (জামায়াত-ই-ইসলামী), নাইজেরিয়া, সেনেগাল থেকে সুদান, মিশর, সিরিয়া, জর্ডান এবং ফিলিস্তিনের মুসলিম ব্রাদারহুড তাই একে অপরের থেকে স্বতন্ত্।
যদি এবং যখন রাষ্ট্রীয় সীমানার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়া হয়, এটি রাষ্ট্রীয় কোন সংকটের সমাধানের অভাবে হয় না, বরং অধিকতর শক্তিশালী রাষ্ট্রের দখলদারী মনোভাবের কারণে অপেক্ষাকৃত ছোট প্রতিবেশীকে পরাভূত করার কারণেই হয়। বাইরের সহায়তার কারণে কুয়েত স্বাধীনতা বজায় রাখতে পেরেছে, কিন্তু সবার ভাগ্যে তা ঘটেনি। উদাহরণস্বরূপ, মরোক্কোর সাথে পশ্চিম সাহারা আর ইন্দোনেশিয়ার সাথে পূর্ব তিমুর জোরপূর্বক একত্র করা হয়েছিল। সত্তর এর দশকে ইরান সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পারস্য উপসাগরে কয়েকটি ছোট দ্বীপের দখল নেয়। আমিরাত দ্বীপপুঞ্জগুলো ফেরত নেয়ার দাবি অব্যাহত রেখেছে, এবং পোলিসারিও আন্দোলনের নেতৃত্বে মরোক্কো থেকে স্বাধীনতার সংগ্রাম চলমান আছে, পশ্চিম সাহারার স্বাধীনতার ইস্যুটিও আজও চাঙ্গা।
ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ এবং আধুনিক মুসলিম রাষ্ট্রের উত্থান
Reviewed by pencil71
on
August 21, 2019
Rating:
Reviewed by pencil71
on
August 21, 2019
Rating:

No comments: