দারসূল কুরআন
সূরা আন-নমল: আয়াত ৫০-৫২
০১ ﴿ وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُوْنَ ০ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ ০ فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
♦অনুবাদ:
তারা নবী হত্যার পরিকল্পনা করল আর আমরাও তাদের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিলাম। তাদের পরিকল্পনা আমার জানা ছিল কিন্তু আমার পলিকল্পনা তারা অবগত ছিল না। এখন দেখে নাও তাদের ভয়াবহ চক্রান্তের কি নিদারূণ পরিণতি হয়েছিল। আমার কঠিন গজব কিভাবে ধ্বংস করেছিল তাদেরকে ও তাদের অভিশপ্ত জাতিকে, এতে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনুভব করার নিদর্শন।
সূরা আন-নমল: ৫০-৫২
♦নামকরণ:
সূরার নাম আন- নামল অর্থাৎ ‘পিপীলিকা’ ‘‘The Ant’
এ সূরার ১৮ নং আয়াতে اَلنَّمَلْ এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আঃ) যাকে আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টির ভাষা বুঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি যখন তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে পিপিলিকার প্রান্তরে পৌছেন তখন একজন পিপিলিকা সর্দার সকলকে গর্তে প্রবেশের নির্দেশ দেন নতুবা তারা সোলায়মান বাহিনীর পদতলে পিষ্ঠ হয়ে যাবে। তার কথা শুনতে পেয়ে সুলায়মান (আঃ) হেসে উঠলেন ও আল্লাহর দেয়া এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করেন।
এ সূরায় তাইاَلنَّمَلْ শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তাফসীরবিদগণ নামকরণের জন্যে ইহাই কারণ বলে মনে করেন।
♦নাযিলের সময়কাল:
এ সূরা মক্কি যুগের মাঝামাঝিতে অবতীর্ণ হয়েছে। ইহা মাক্কী সূরা। সে সময়টি ছিল অত্যাচার ও নির্যাতনের কঠিন সময়। ঈমানদারদের উপর যুলুম ও নিপড়নের পাহাড় ভেংগে পড়েছিল। সহযোগীতার হাত তাদের জন্যে প্রসারিত ছিল না, পৃথিবী ছিল তাদের জন্যে সংকীর্ন।
♦তাফসীর:
وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُوْنَ
“তার যখন নবী ও দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা করল আমিও তাদের ব্যাপারে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।” -সূরা নমল: ৫০
-এ مَكَرْ, তথা গোপন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত যে পৃথিবীর আজ পর্যন্তের মানব জীবন দীর্ঘ ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। আফসোসের বিষয় হলো পৃথিবীর সকল যুগে সত্যের পতাকাবাহী ন্যায়ের ঝান্ডা বহনকারী, ইনসাফের দিকে আহবান কারীদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে জালেমদের সৃষ্টি এ গোফন ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের বিষাক্ত তীর।
আর সে ষড়যন্ত্র এত ভয়াবহ ছিল পাহাড় পর্বত যেন কঠিন প্রকম্পনে কেঁপে উঠেছিল। তাদের সে চক্রান্তের মূল লক্ষ্য ছিল খুন।
এত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও হতার পর হত্যার নীল নকশার এ ভয়াল বিশ্বে দ্বীনের দায়ীরা কিভাবে দাঁড়াবে? কিভাবে সংশোধন ও সংস্কারের ইলাহী কর্মকা- আনযাম দেবে?
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُوْنَ০
“লোকেরা কি নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমাদের আযাব সহসা রাতের আঁধারে আপন গৃহে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদেরকে পাকাড়াও করবেনা।” -সূরা আ’রাফ: ৯৭
তাফসীর:
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ
দেখে নাও, তাদের লোমহর্ষক চক্রান্তের কি পরিণতি হয়েছে! আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের ও তাদের সমর্থনকারী জনপদের একজনকেও কঠিন শস্তির চাবুক থেকে রেহাই দেয় নি।” -সূরা নমল: ৫১
তাফসীরবিদগণ বলেছেন যে হযরত সালেহ (আঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী সামুদ জাতির বারজন দলপতি পাহাড়ের গুহায় বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। সেখান থেকে উঠে আসার সুযোগ তাদের কে দেয়া হয়নি।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ০
আল্লাহ তায়ালা যখন কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চান তিনি শুধু বলেন, হয়ে যাও, আর অমনি উহা হয়ে যায়।” -সূরা ইয়াসীন: ৮২
প্রতিটি যুগে দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত তাগুতি শক্তিরা নিক্ষেপ করেছে ষড়যন্ত্রের বিষাক্ত তীর, পাঠিয়েছে মরণের ভয়াল চিঠি, বিস্পোরিত করেছে অত্যাচারের বোমা।
তাফসীর:
فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
“তাদের বাড়ীঘর, সম্পদ ও ব্যবহার্য সবকিছুর ধ্বংসাবশেষ মুখ ধুবড়ে রয়েছে বিরান জমিনে; জুলুমের কারণে তাদের উপর নেমে এসেছে আল্লাহর গজব। জ্ঞানীদের জন্যে এর মধ্যে রয়েছে অনন্ত শিক্ষার উৎস।” -সূরা নফল: ৫২
বঞ্চিত ও মজলুমেরা এতটুকু অধিকার ও ইনসাফের ব্যর্থ আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের আদালতের কিলান ধরে, মজলুমদের চোখের পানিতে সিক্ত হয়েছিল শুস্ক মাটি সিক্ত হয়নি তাদের পাশান হৃদয়। এর চেয়েও ভয়াবহ ছিল তাদের নিকট আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে লাখো পয়াগাম্বর হাজির হয়েছে অহীর দাওয়াত নিয়ে। দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তারা ক্ষান্ত হয়নি বরং দায়ীদরেকে পাথরের আঘাতে জর্জরিত করেছে, উত্তপ্ত লাল কয়লার উপর শুইয়ে রেখেছে জীবিত মানুষ।
আল্লাহ তায়ালা আফসোস করে বলেন-
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِنْ رَسُوْلٍ إِلاَّ كَانُوْا بِهِ يَسْتَهْزِئُوْنَ০
আফসোস আমার বান্দাদের জন্যে! তাদের নিকট এমন একজন রাসূল ও আসলনা যাতে তারা ঠাট্টা, বিদ্রোপ, অপমান ও নির্যাতন করেনি।” -সূরা ইয়াসীন: ৩০
গজব ও শাস্তি জালিমদের জন্যে অবারিত-
فَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوْشِهَا وَبِئْرٍ مُعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَشْيِدٍ০
কত জনপদকে গজব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছি যাদের অধিবাসীরা ছিল জালেম ও সীমা লংঘন কারী, তাদের হাম্মাম খানা ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে।” -সূরা হজ্জ: ৪৫
তাফসীর:
إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনন্ত শিক্ষার উৎস।
জ্ঞান লাভ করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা গজব প্রাপ্ত অতীত জাতির হাজার ধ্বংসাবশেষ রেখে দিয়েছেন।
এই জাতিরা কি কি ভয়ংকর গুনাহে লিপ্ত হয়েছিল আর সাবধান বাণী উচ্চারণকারী নবীদেরকে ও তাদের সাথীদের কি নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। ইতিহাস বলছে একদিনের মধ্যে প্রায় ৪৩ জন পর্যন্ত নবী হত্যা করার ঘটনা বনী ইসরাঈলের মানুষেরা এ পৃথিবীতে সংগঠিত করেছে।
পৃথিবীর মানুষের জন্যে আর একটি পরিতাপের বিষয় এইযে, খুব কম সংখ্যক মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা হাসিল করে।
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসীদের অন্যতম মিশরের রাজা ফিরাউন।
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيْكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ اٰيَةً وَإِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ اٰيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ০
আজ আমরা তোমার লাশ ধ্বংস হতে দেব না, যাতে পরবর্তী মানব জাতির নিদর্শন করে রেখে দেব। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন।” -সূরা ইউনুস: ৯২
মিশরের হাজারো পর্যটকের ঢল নামে ফিরাউনের সংরক্ষিত লাশ দেখার জন্য। কিন্তু উহা দেখে শিক্ষা গ্রহন করে খুব কম লোকে।
♦শিক্ষণীয় বিষয়:
ক. সকল যুগে দ্বীনের পথে আহবান কারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে।
খ. সত্যের পক্ষ্যে অবস্থানকারীদের পক্ষে অবস্থান রয়েছে মহান প্রভু।
ঙ. ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে সকলের জন্যে রয়েছে শিক্ষা-পাপাচার ও অহংকার
চ. কৌশল দিয়ে গজব ঠেকানো যাবে না- ‘ঈমান ও চরিত্র হচ্ছে প্রতিরক্ষা।
-মুমিনদেরকে সকল সময় ও সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও তাওয়াক্কুল করতে হবে। যারা আল্লাহ্র উপর ভরসা করে তিনি তাদের জন্যে যথেষ্ট।
মু. মেসবাহ উদ্দিন
সূরা আন-নমল: আয়াত ৫০-৫২
০১ ﴿ وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُوْنَ ০ فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ ০ فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
♦অনুবাদ:
তারা নবী হত্যার পরিকল্পনা করল আর আমরাও তাদের শাস্তির সিদ্ধান্ত নিলাম। তাদের পরিকল্পনা আমার জানা ছিল কিন্তু আমার পলিকল্পনা তারা অবগত ছিল না। এখন দেখে নাও তাদের ভয়াবহ চক্রান্তের কি নিদারূণ পরিণতি হয়েছিল। আমার কঠিন গজব কিভাবে ধ্বংস করেছিল তাদেরকে ও তাদের অভিশপ্ত জাতিকে, এতে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনুভব করার নিদর্শন।
সূরা আন-নমল: ৫০-৫২
♦নামকরণ:
সূরার নাম আন- নামল অর্থাৎ ‘পিপীলিকা’ ‘‘The Ant’
এ সূরার ১৮ নং আয়াতে اَلنَّمَلْ এর কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আঃ) যাকে আল্লাহ তায়ালা সকল সৃষ্টির ভাষা বুঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। তিনি যখন তার সৈন্য বাহিনী নিয়ে পিপিলিকার প্রান্তরে পৌছেন তখন একজন পিপিলিকা সর্দার সকলকে গর্তে প্রবেশের নির্দেশ দেন নতুবা তারা সোলায়মান বাহিনীর পদতলে পিষ্ঠ হয়ে যাবে। তার কথা শুনতে পেয়ে সুলায়মান (আঃ) হেসে উঠলেন ও আল্লাহর দেয়া এ অনুগ্রহের শোকর আদায় করেন।
এ সূরায় তাইاَلنَّمَلْ শব্দটি একটি বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তাই তাফসীরবিদগণ নামকরণের জন্যে ইহাই কারণ বলে মনে করেন।
♦নাযিলের সময়কাল:
এ সূরা মক্কি যুগের মাঝামাঝিতে অবতীর্ণ হয়েছে। ইহা মাক্কী সূরা। সে সময়টি ছিল অত্যাচার ও নির্যাতনের কঠিন সময়। ঈমানদারদের উপর যুলুম ও নিপড়নের পাহাড় ভেংগে পড়েছিল। সহযোগীতার হাত তাদের জন্যে প্রসারিত ছিল না, পৃথিবী ছিল তাদের জন্যে সংকীর্ন।
♦তাফসীর:
وَمَكَرُوْا مَكْرًا وَمَكَرْنَا مَكْرًا وَهُمْ لاَ يَشْعُرُوْنَ
“তার যখন নবী ও দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনা করল আমিও তাদের ব্যাপারে শাস্তির সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলাম।” -সূরা নমল: ৫০
-এ مَكَرْ, তথা গোপন ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত যে পৃথিবীর আজ পর্যন্তের মানব জীবন দীর্ঘ ইতিহাসের সাথে সম্পর্কিত। আফসোসের বিষয় হলো পৃথিবীর সকল যুগে সত্যের পতাকাবাহী ন্যায়ের ঝান্ডা বহনকারী, ইনসাফের দিকে আহবান কারীদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে জালেমদের সৃষ্টি এ গোফন ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের বিষাক্ত তীর।
আর সে ষড়যন্ত্র এত ভয়াবহ ছিল পাহাড় পর্বত যেন কঠিন প্রকম্পনে কেঁপে উঠেছিল। তাদের সে চক্রান্তের মূল লক্ষ্য ছিল খুন।
এত ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ও হতার পর হত্যার নীল নকশার এ ভয়াল বিশ্বে দ্বীনের দায়ীরা কিভাবে দাঁড়াবে? কিভাবে সংশোধন ও সংস্কারের ইলাহী কর্মকা- আনযাম দেবে?
أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَنْ يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُوْنَ০
“লোকেরা কি নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমাদের আযাব সহসা রাতের আঁধারে আপন গৃহে ঘুমন্ত অবস্থায় তাদেরকে পাকাড়াও করবেনা।” -সূরা আ’রাফ: ৯৭
তাফসীর:
فَانْظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ مَكْرِهِمْ أَنَّا دَمَّرْنَاهُمْ وَقَوْمَهُمْ أَجْمَعِيْنَ
দেখে নাও, তাদের লোমহর্ষক চক্রান্তের কি পরিণতি হয়েছে! আমরা ষড়যন্ত্রকারীদের ও তাদের সমর্থনকারী জনপদের একজনকেও কঠিন শস্তির চাবুক থেকে রেহাই দেয় নি।” -সূরা নমল: ৫১
তাফসীরবিদগণ বলেছেন যে হযরত সালেহ (আঃ) কে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী সামুদ জাতির বারজন দলপতি পাহাড়ের গুহায় বসে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল। সেখান থেকে উঠে আসার সুযোগ তাদের কে দেয়া হয়নি।
إِنَّمَا أَمْرُهُ إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُوْلَ لَهُ كُنْ فَيَكُوْنُ০
আল্লাহ তায়ালা যখন কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে চান তিনি শুধু বলেন, হয়ে যাও, আর অমনি উহা হয়ে যায়।” -সূরা ইয়াসীন: ৮২
প্রতিটি যুগে দ্বীনের দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠিত তাগুতি শক্তিরা নিক্ষেপ করেছে ষড়যন্ত্রের বিষাক্ত তীর, পাঠিয়েছে মরণের ভয়াল চিঠি, বিস্পোরিত করেছে অত্যাচারের বোমা।
তাফসীর:
فَتِلْكَ بُيُوتُهُمْ خَاوِيَةً بِمَا ظَلَمُوا إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
“তাদের বাড়ীঘর, সম্পদ ও ব্যবহার্য সবকিছুর ধ্বংসাবশেষ মুখ ধুবড়ে রয়েছে বিরান জমিনে; জুলুমের কারণে তাদের উপর নেমে এসেছে আল্লাহর গজব। জ্ঞানীদের জন্যে এর মধ্যে রয়েছে অনন্ত শিক্ষার উৎস।” -সূরা নফল: ৫২
বঞ্চিত ও মজলুমেরা এতটুকু অধিকার ও ইনসাফের ব্যর্থ আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের আদালতের কিলান ধরে, মজলুমদের চোখের পানিতে সিক্ত হয়েছিল শুস্ক মাটি সিক্ত হয়নি তাদের পাশান হৃদয়। এর চেয়েও ভয়াবহ ছিল তাদের নিকট আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে লাখো পয়াগাম্বর হাজির হয়েছে অহীর দাওয়াত নিয়ে। দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে তারা ক্ষান্ত হয়নি বরং দায়ীদরেকে পাথরের আঘাতে জর্জরিত করেছে, উত্তপ্ত লাল কয়লার উপর শুইয়ে রেখেছে জীবিত মানুষ।
আল্লাহ তায়ালা আফসোস করে বলেন-
يَا حَسْرَةً عَلَى الْعِبَادِ مَا يَأْتِيْهِمْ مِنْ رَسُوْلٍ إِلاَّ كَانُوْا بِهِ يَسْتَهْزِئُوْنَ০
আফসোস আমার বান্দাদের জন্যে! তাদের নিকট এমন একজন রাসূল ও আসলনা যাতে তারা ঠাট্টা, বিদ্রোপ, অপমান ও নির্যাতন করেনি।” -সূরা ইয়াসীন: ৩০
গজব ও শাস্তি জালিমদের জন্যে অবারিত-
فَكَأَيِّنْ مِنْ قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوْشِهَا وَبِئْرٍ مُعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَشْيِدٍ০
কত জনপদকে গজব দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছি যাদের অধিবাসীরা ছিল জালেম ও সীমা লংঘন কারী, তাদের হাম্মাম খানা ও প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ স্মৃতি হয়ে পড়ে রয়েছে।” -সূরা হজ্জ: ৪৫
তাফসীর:
إِنَّ فِي ذٰلِكَ لَاٰيَةً لِقَوْمٍ يَعْلَمُوْنَ
এর মধ্যে জ্ঞানীদের জন্যে রয়েছে অনন্ত শিক্ষার উৎস।
জ্ঞান লাভ করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা গজব প্রাপ্ত অতীত জাতির হাজার ধ্বংসাবশেষ রেখে দিয়েছেন।
এই জাতিরা কি কি ভয়ংকর গুনাহে লিপ্ত হয়েছিল আর সাবধান বাণী উচ্চারণকারী নবীদেরকে ও তাদের সাথীদের কি নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল। ইতিহাস বলছে একদিনের মধ্যে প্রায় ৪৩ জন পর্যন্ত নবী হত্যা করার ঘটনা বনী ইসরাঈলের মানুষেরা এ পৃথিবীতে সংগঠিত করেছে।
পৃথিবীর মানুষের জন্যে আর একটি পরিতাপের বিষয় এইযে, খুব কম সংখ্যক মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা হাসিল করে।
দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ সন্ত্রাসীদের অন্যতম মিশরের রাজা ফিরাউন।
فَالْيَوْمَ نُنَجِّيْكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُوْنَ لِمَنْ خَلْفَكَ اٰيَةً وَإِنَّ كَثِيْرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ اٰيَاتِنَا لَغَافِلُوْنَ০
আজ আমরা তোমার লাশ ধ্বংস হতে দেব না, যাতে পরবর্তী মানব জাতির নিদর্শন করে রেখে দেব। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ আল্লাহর আয়াত থেকে শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে উদাসীন।” -সূরা ইউনুস: ৯২
মিশরের হাজারো পর্যটকের ঢল নামে ফিরাউনের সংরক্ষিত লাশ দেখার জন্য। কিন্তু উহা দেখে শিক্ষা গ্রহন করে খুব কম লোকে।
♦শিক্ষণীয় বিষয়:
ক. সকল যুগে দ্বীনের পথে আহবান কারীদের বিরুদ্ধে বড় বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে।
খ. সত্যের পক্ষ্যে অবস্থানকারীদের পক্ষে অবস্থান রয়েছে মহান প্রভু।
ঙ. ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতি থেকে সকলের জন্যে রয়েছে শিক্ষা-পাপাচার ও অহংকার
চ. কৌশল দিয়ে গজব ঠেকানো যাবে না- ‘ঈমান ও চরিত্র হচ্ছে প্রতিরক্ষা।
-মুমিনদেরকে সকল সময় ও সর্বাবস্থায় আল্লাহ্ তায়ালার উপর পূর্ণ আস্থা ও তাওয়াক্কুল করতে হবে। যারা আল্লাহ্র উপর ভরসা করে তিনি তাদের জন্যে যথেষ্ট।
মু. মেসবাহ উদ্দিন
দারসূল কুরআন সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবেই-Pencil71
Reviewed by pencil71
on
September 25, 2018
Rating:
Reviewed by pencil71
on
September 25, 2018
Rating:

No comments: