একটা ওমর এই জামানায় বড়ই প্রয়োজন
গতকাল অফিসে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে বাসায় আসার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম মনটা আনচান আনচান করছিল বাসায় যে বাবা মা এসেছে তাদের দেখার জন্য অনেকদিন থেকে দেখা হয় না তাদের সাথে । কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে ভদ্রায় আসলাম ।
বিনোদপুরে আসার জন্য অটোতে বসলাম অটোর ড্রাইভার বিনোদপুর বিনোদপুর বলে যাত্রী ডাকতেছিল । পাশে এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে ।
ড্রাইভার বলল.. যাবেন নাকি ?
মহিলা বলল... ভাড়া কত !
ড্রাইভার বলল... কেন ১০ টাকা !
মহিলা বলল...৮ টাকা দেবো .. যাবেন !
ড্রাইভার বলল... তাহলে থাকেন ?
মহিলা চুপচাপ করে দাঁড়িয়ে থাকোলো ।
কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার বলল যে আচ্ছা চলেন ।
মহিলার কাছে দুই টাকার মূল্য কত বেশি ! অথচ কয়েক বছর আছে আগে আমাদের দেশের অর্থমন্ত্রী বলল যে দুই টাকার নোট এই দেশে আর থাকবে না ।অসহায় মানুষেরদের কাছে এই দুই টাকার মূল্য আসমান পরিমাণ অথচ আমি যদি নিজেকে প্রশ্ন করি আমরা যদি নিজেদেরকে প্রশ্ন করি এভাবে দুই টাকা এক টাকা বা কত টাকা মনের অজান্তেই খরচ হয়ে যায় ।
মহিলাকে বললাম কেন ভিক্ষা করেন বলল যে বাবা আমার সংসারে কর্ম করার মতন কেউ নেই বাবা। আজকে সারাদিন না খেয়ে আছি । বললাম যে পরিবারের লোকজন কি অবস্থা ।
মহিলা বলল,
তারাও না খেয়ে আছে
আপনার স্বামী কি করে ?
বলল যে, রেল এক্সিডেন্টে তার এক পা হারিয়েছে তিনি হাঁটতে পারেনা । কর্ম অক্ষম বাসায় থাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে ।
বললাম, আর ছেলে মেয়ে
দুই ছেলে পড়ালেখা করে একটার বয়স এগারো আরক জনের বয়স ৭ বছর ।
মহিলা বলল,
আমার খুব কষ্ট হয় আমার পেটে টিউমার চিকিৎসার খরচ আর এখনকার যে দ্রব্যমূল্য দাম ।আমি বললাম সারাদিনে কত টাকা ইনকাম করেছেন তিনি বললেন, যে টাকা পয়েছি চাউলের পয়সা হয়েছে।বিনোদপুরে আর কিছুক্ষণ ভিক্ষা করে চাল ও কিছু তরিতরকারি কিনে বাসায় যাব ।
বললাম বাসা ভাড়া কত ?
বলল যে, বাসা ভাড়া 700 টাকা ।
রান্না করেন কিসে বলল যে কখনো বিকালে বা সকালে গাছের পাতা বা খরি কুড়িয়ে রান্না করে খাই।মুহূর্তের মধ্যে ড্রাইভার বলতেছে চলে এসেছি বিনোদপুর।
এভাবেই চলছে বাংলাদেশের হতদরিদ্র মানুষের দৈনন্দিন জীবন বাংলাদেশ প্রায় সাড়ে ছয় কোটি মানুষ শ্রমজীবী মানুষ এবং কোটি কোটি মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে ।
এভাবেই তাদের দিন যায় দিন আসে রাত যায় আবার রাত আসে। সপ্তাহ পেরিয়ে মাস পেরিয়ে বছরও পেড়িয়ে যায় এরপর কবরে হয় তাদের স্থায়ী ঠিকানা ।
অথচ দেশের উন্নয়নের সূচক দিন দিন বৃদ্ধি পায় পদ্মা সেতু হয় দেশ হয়ে যায় সিঙ্গাপুর,মালোশিয়া আর কানাডা কেউবা আবার চাঁদের দেশে উড়াল দেওয়ার প্রস্তুতি নেয় ।
নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক নেতারা গগন বিদায় চিৎকার করে কেউবা আবার বলে গরিবের বন্ধু অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর ।
কেউ আবার বক্তৃতার মঞ্চে মাওলানা সেজে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ মানুষের সামনে কঠিন বক্তৃতার বৃষ্টিধারা ছড়িয়ে দেয় ।
এই নেতার চিৎকার ও বক্তৃতার মঞ্চে মাওলানা সাহেবের চিৎকার এগুলো করে বেলাল হেলাল উঠেছে আকাশে আর অসহায় কৃষকের ঘরে এক মুঠো ভাত জোটে না।
আমরা বিপ্লবের কথা বলি সমাজ পরিবর্তনের কথা বলি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার যাওয়ার জয়গানে তুলি । বিগত ১২ থেকে ১৫ টি বছর ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ থেকে ইউনিয়নের সেই সমর্থক পর্যন্ত সরকারের জুলুমের শিকার যথাক্রমে নির্যাতনের স্টিম রোলারকে উপেক্ষা করে আমরা পথ চলছি উত্তপ্ত এক মরুর উপত্যকা পেরিয়ে আসমানের দিকে মুক্তির নিশানার দিকে ।
দরিদ্র মানুষের পাশে আমাদের সংগঠন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে তবে এটা যথেষ্ট নয় আরো বেশি দরদ ভরা মন নিয়ে আরো বেশি আকাশের মতন রহম দিল নিয়ে আমাদেরকে ছুটতে হবে । আবারো জেগে উঠতে হবে ওমরের মত করে দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ১০ বছর আমিরুল মুমিনের দায়িত্ব পালনে বলেছেন একটি কুকুরও যদি মারা যায় আল্লাহর কাছে জবাব দিতে হবে । দিনের আলোতে ও রাতের আঁধারে দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বলতো যে ঘরে খাবার আছে কি খাবার লাগবে কিনা । হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সময় যখন দুর্ভিক্ষ শুরু হল তিনি অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন তার স্ত্রীর সেই কথা পৃথিবীর ইতিহাসের স্বর্ণালী অক্ষরে লেখা থাকবে বলেছিলেন এ সময় গুলোতে ওমর এত বেশি কান্না করেছেন তার দুচোখে কালো দাগ পড়ে গিয়েছিল আর আহাজারি করে বলতো ও আল্লাহ এই ওমর তোমার কাছে কি জবাব দেবে ।
সর্বশেষে অশ্রু নয়নে বলতে চাই হে আরশের মালিক আমার এই সোনার দেশে আমার এই ভাটিয়ালি দেশে আমার এই ফজরের আজানে মানুষ ও পাখিদের জেগে ওঠার এই দেশে একটা ওমর খুব প্রয়োজন ।
আবারো ওমর রা মত শাসক এই জামানায় আসবে।
ইংশা আল্লাহ, ইংশা আল্লাহ এবং ইংশা আল্লাহ
মোঃ সামিউল ইসলাম
সাবেক কেন্দ্রীয় পাঠাগার সম্পাদক
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির
একটা ওমর এই জামানায় বড়ই প্রয়োজন | মোঃ সামিউল ইসলাম
Reviewed by pencil71
on
October 17, 2022
Rating:
একটা ওমর বড়ই প্রয়োজন!
ReplyDelete