দীর্ঘ পাঁচ বছর পরে আবার আসলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গত পাঁচ বছর যাবৎ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়। গুরুদাসপুর ইউনিয়নে তিনজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। বিএনপি মনোনিত সাবেক চেয়ারম্যান ধলু সরদার এবং অপর দুইজন ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ফিরোজ মাষ্টার এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রহমতউল্লাহ ফরাজি। বর্তমান চেয়ারম্যান ধলু সরদার এবং ফিরোজ মাষ্টারের ভালো জনসমর্থন আছে, কিন্তু ফরাজি সাহেবের টাকা ব্যয় করার যথেষ্ট জো আছে। এবারের নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করতে গেলে হয়তোবা কয়েক দিস্তা কাগজ শেষ হবে, কিন্তু প্রার্থীদের তালিকা শেষ হবে না ইনশাআল্লাহ। ফরাজি সাহেবের নির্বাচন করার কোন ইচ্ছায় ছিলোনা। কিন্তু এলাকার মানুষের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করার মনস্থির করলেন। মলফেৎ কাজী, বাবর ঘরামি এবং মুহসিন জোয়ার্দার সহ এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ ফরাজি সাহেবকে বারবার অনুরোধ করে নির্বাচনে আসতে রাজি করছে। সকল জায়গায় দুধের মাছির মতো কিছু লোক থাকে, এই ইউনিয়নের মান্যগণ্য ব্যক্তিদের অবস্থা তার ব্যাতিক্রম নয়। এজন্যই তারা অর্থশুন্য সাবেক চেয়ারম্যানের সাপোর্ট ছেড়ে, সুখের পায়রার ন্যায় ধনবান প্রার্থী ফরাজি সাহেবের পক্ষে নির্বাচনে নেমছে। নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। মাষ্টার এবং ফরাজি সাহেব দুজনই দলীয় টিকিট পাওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন। উপজেলা এবং জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের বাড়িতে চেয়ারম্যান প্রার্থীদ্বয়ের আনাগোনা বেড়ে গেলো। ফরাজি সাহেব রাজনীতি না করে, অর্থবৈভবের কারণে লগন চাঁদার ন্যায় নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পেয়ে গেলেন। এইবার সবার নজর ফরাজি সাহেবের দিকে। তবে ধলু সরদার এবং মাষ্টার সাহেব উভয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করবে। চায়ের দোকানে, খেলার মাঠে, কৃষকের মুখে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ ইউনিয়ন বাসী সকলের মুখে আলোচনা ও সমালোচনার বিষয় হচ্ছে নির্বাচন, সবাই বলে এবারের নির্বাচন হবে শম্ভু-নিশম্ভের লড়াই । নির্বাচনকে শিশু কিশোরেরা ঈদ উৎসবের মত মনে করে আনন্দ উৎফুল্ল শুরু করলো। তারা হলো গোল আলুর মতো,তাঁরা সব প্রার্থীরেই সাপোর্টার। প্রার্থী দেখলেই তাঁরা মিছিল শুরু করে, আর প্রার্থীরা তাদের কেক, বিস্কুট সহ নানা খাবার খাওয়ায়। ফরাজি সাহেব ইউনিয়নের মাতুব্বর গোছের সকলকে তার পক্ষে নিয়ে নিছেন। আর তিনি এটা করতে পেরেছেন একমাত্র দক্ষিণার জোরে। ফরাজি সাহেবের টাকা পয়াসা অনেক আছে কিন্তু রাজনীতিতে তিনি একেবারে কেবলা হাকিম। তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর থাকলেন তার খয়ের খাঁ সাপোর্টার এবং দলীয় টিকিটের জন্য। উপজেলা এবং জেলা আওয়ামী নেতাগণও তার জন্য নির্বাচনি প্রচারণায় নামলেন। এবং দলীয় সকল নেতা কর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য নির্দেশ দিলেন। কিন্তু নেতাদের কথায় কাজ না হওয়াতে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি চেয়ারম্যান ক্যান্ডিডেট ফিরোজ মাষ্টার সহ অসংখ্য নেতাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হলো। ফরাজি সাহেব যেখানে যায় সবাই বলে এই এলাকায় সবাই নৌকার পক্ষেের লোক, এই সেন্টারে আপনি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন। এছাড়া কিছু লোক গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিলেন নৌকা প্রার্থীর জন্য। ধলু সরদার ধানের শীষের প্রার্থী বলে ঠিকভাবে প্রচার প্রচারণা করতে পারেন না। এবং সারা জীবন যারা বিএনপি করতো তারাও ভূতের মুখে রাম নাম জপে নৌকার পক্ষে কাজ শুর করলেন। মাষ্টার সাহেবকে উপরের নেতারা দুই একজন মনে মনে সাপোর্ট করে বলে তিনি নির্বিঘ্নে প্রচার শুরু করলেন। তার মার্কা হচ্ছে আনারস। তাছাড়া তিনি ভালো একজন বাগ্মীও বটে। অবশেষে সকল চড়াই উৎরাই পেরিয়ে ১২ সেপ্টেম্বর আসলো বহুল প্রত্যাশিত নির্বাচেনর দিন। সবার সকল দূর্ভাবনাকে দূর করে সুষ্ঠু,নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহনমূলক ভাবে সম্পন্ন হলো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। তবে একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে একজন মারাত্মক আহত হয়, দুই তিনজন সামান্য আহত হয়। নির্বাচেনর ফল ঘোষণা করা হলো উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ে। ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হলো সন্ধ্যার পরে। ফলাফল অনুযায়ী চেয়ারম্যান পদে বেশি সংখ্যক ৫৩৭২ টি ভোট পেয়ে আনারস মার্কায় নির্বাচিত হয়েছেন ফিরোজ মাষ্টার। ৩৪৬৮ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী হয়েছেন ধানের শীষ প্রতীকে ধলু সরদার। এবং ৩১৩ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান লাভ করেছেন নৌকা প্রতীকে রহমাতউল্লাহ ফরাজি সাহেব। ফলাফল শুনে ফরাজি সাহেব খুবেই হতাশ এবং রাগান্বিত হলেন। ওলামালীগের ইউনিয়ন সভাপতি মাওলানা আফসের উদ্দীন ফারজি সাহেবকে শান্তনা দিয়ে বলেন আপনার কপাল কত ভালো আপনি ৩১৩ টি ভোট পাইছেন, আল্লাহর নবী বদর যুদ্ধে ৩১৩ জন সৈন্য নিয়ে কাফেরদের সাথে লড়াই করেছেন। একথা শুনে তিনি কোন উত্তর করলেন না। কিছুক্ষণ পর দূর থেকে মাষ্টার সাহেবের বিজয় মিছিলের গর্জন শোনা গেলো। হঠাৎ কে যেন খবর নিয়ে আসলো দুপুরের আহত বিধবা মরিয়ম বিবির ১৬ বছরের ছেলে নিরব সদর হাসপাতালে মারা গেছে। খবর শুনে ফরাজি সাহেব স্থল পথে নয়,নৌপথ দিয়ে রাতেই ঢাকা চলে গেলেন। মো. বিল্লাল হোসেন বিএ মাদারীপুর সরকারি কলেজ মাদারীপুর |
আবার আসলো নির্বাচন | মো. বিল্লাল হোসেন
Reviewed by pencil71
on
August 18, 2022
Rating:
No comments: