Technology

test

জমির মালিকানা যাচাই পদ্ধতি ও আইনী পরামর্শ || এডভোকেট মু. রিয়াজ উদ্দিন


জমির মালিকানা যাচাই পদ্ধতি ও আইনী পরামর্শ

(Title Test)
এডভোকেট মু. রিয়াজ উদ্দিন

জমির মালিকানা হস্তান্তরে ক্রেতা বা ভাবী ক্রেতাকে জমির প্রকৃত মালিকের নিকট হইতে যাচাই পূর্বক সম্পত্তি খরিদ করা আবশ্যক অন্যথায় সল্প মেয়াদ অন্তে বা দীর্ঘ মেয়াদ অন্তেও এর প্রকৃত মালিক বা তার বৈধ ওয়ারিশগণ মালিকানা দাবী করতে পারে আপনার খরিদা জমিতে দাবী উত্থাপন করে আপনাকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলতে পারে বা বিব্রত করতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় আপনি বহুদিন পূর্বে জমি কিনেছেন কাচাঁ ঘর-বাড়ী করে বসবাস করছেন বিল্ডিং করার মুহুর্তে নিষেধাজ্ঞা জারী করে আপনাকে ঠেকিয়ে দিচ্ছে। যে কারণে মালিকানা নিস্কণ্টক না হলে যে কোন মুহুর্তে আপনি বিপত্তিতে পড়তে পারেন যার জন্য প্রয়োজন আপনার সম্পদের সঠিক মালিকানা। মনে রাখতে হবে সঠিক মালিক একজনই কিন্তু ভুল মালিক বহুজন। মালিকানা যাচাইয়ে আমরা স্থাবর সম্পত্তির ২ ধরনের মালিক বা কর্তৃপক্ষ দেখতে পাই। যেমন ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা লীজ ফ্রী প্রপার্টি অন্যটি হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা বা সরকারি সম্পত্তি বা লীজ হোল্ড প্রপার্টি। কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা সংস্থার সম্পত্তি ক্রয়ে আলাদা আলাদা সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি ক্রয়ে সিএস মালিকানা থেকে আরম্ভ করে সিএস পরবর্তী এসএ,আরএস ও বিএস/ঢাকা সিটি জরীপ বিক্রেতার নামে বা তার ভায়া মালিকের নামে আছে কিনা খতিয়ান যাচাই করে দেখতে হবে। সিএস - বিএস জরীপের সময়কাল মোটামুটি এরকম সিএস ১৮৮৯-১৯৪০, এসএ পূর্ববর্তী আরএস ১৯৪০-১৯৫২(কেবল বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল জেলা),এসএ ১৯৫৬-১৯৬৩, এসএ পরবর্তী আরএস ১৯৬৫-১৯৮৫(বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল ব্যতিত) ঢাকা সিটি জরীপ ১৯৯৫-২০১০, বিএস জরীপ ১৯৯০ সাল থেকে চলমান আছে। উপরিউক্ত জরীপকাল গুলো উল্লেখ করা হলো এ কারণে যে যখনই কোন জরীপ হয়েছে তখনই ঐ সম্পত্তি কারো না কারো নামে রেকর্ড হয়েছে।
কোন রেকর্ডে সাধারণত ৩টি কারণে কারো নামে রেকর্ড অন্তর্ভুক্ত হতে পারে- "এক" ক্রয়ের মাধ্যমে "দুই" ওয়ারিশাণ সুত্রে "তিন" আদালতের আদেশে চতুর্থ কারণটি হাতে পারে ভুলবশত ধরুন আপনি যার কাছ থেকে সম্পত্তি খরিদ করতে চাইছেন ঐ সম্পত্তি আপনার বিক্রেতা ১৯৮০ সালে খরিদ করেছিল বলে আপনাকে দলিল দেখায় এক্ষেত্রে ঐ বিক্রেতার নাম বা তার পূর্ব মালিকের নামে হিসাব অনুযায়ী আরএস রেকর্ডে থাকা আবশ্যক। অর্থাৎ সম্পত্তিটি যখনই হস্তান্তর হয়েছে তার আগে পারের রেকর্ডে এই হস্তান্তরটি কার নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে তা গভীরভাবে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। রেকর্ড মালিকানা অর্জনের একমাত্র উপায় না হলেও এর গুরুত্ব অপরিসীম কারণ রেকর্ডে মালিকানার প্রতিফলন না থাকলে নামজারীর করা যাবে না। রেকর্ডে নাম থাকলেও ইহা মালিকানার চুড়ান্ত প্রমাণ নয় বা নাম না থাকলেও মালিকানা চলে যাবে না কথা সত্য হলেও রেকর্ড মিলিয়ে দেখতে হবে। পূর্বাপর কারা সম্পত্তিটির মালিক ছিলেন তার সাথে রেকর্ডধারীর সম্পর্ক কি। তিনি ওয়ারিশ সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে থাকলে কতটুকুর মালিক ছিলেন রেকর্ডে কমবেশি হয়েছে কিনা আপনার বিক্রেতা কোন ওয়ারিশকে অনুপস্থিত দেখিয়ে নিজ নামে বেশী রেকর্ড করিয়ে নিয়েছেন কিনা। খতিয়ানে তার প্রাপ্য মোট অংশ বন্টন ব্যতীত এক দাগে বিক্রি করতে চাচ্ছেন কিনা, বিক্রি কালে তার নামে কি ধরনের নামজারী ছিল বা আছে। সম্পত্তিটি বিক্রেতার দখলে আছে কিনা। বিক্রেতার প্রদত্ত মালিকানার কাগজপত্র গুলো অফিসের ভলিউমের সাথে মিল আছে কিনা, যাচাই করতে হবে।
প্রস্তাবিত সম্পত্তি যদি দাতা কোন মোকদ্দমা বা নিলাম খরিদসূত্রে মালিক হন তবে ঐ মামলার সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে মিলিয়ে দেখতে হবে কোর্ট কর্তৃক দখল দেয়া হলে দখলনামা আছে কিনা দেখে নিতে হবে।
আজকাল প্রায়ই ব্রোকার বা মিডিয়ার মাধ্যমে জমি কেনা বেচা হতে দেখা যায়। মিডিয়ার লোকেরা প্রায়ই সময় দিয়ে বেচা-কেনা করতে চায় না এখনই খরিদ না করলে অন্যত্র বেশি দামে বিক্রি হয়ে যাবে এরকম তাড়াহুড়ো করতে থাকে যা প্রায়ই ত্রুটিপূর্ণ জমি ত্রুটিটি ধরা পড়ার আগে সারানোর একটি কৌশল বটে। যদি মাইনর কোন ত্রুটি থাকে যা খরিদ করার পরেও সারানো যাবে বলে মনে হয় তাহলে খরিদ করা যেতে পারে। খরিদকালীন বিক্রেতার কাছ থেকে সকল খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি ও ভায়া মুল দলিল চেয়ে নিতে হবে। কারণ বিক্রেতার মালিকানার বিষয়টি প্রমাণের জন্য এসকল সরবরাহ করা বিক্রেতারই দায়িত্ব। আজকাল জমি ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে পূর্বে বায়না নামা বা আমমোক্তারের(Power of Attorney) প্রচলন দেখা যায় মনে রাখতে হবে। বায়না নামা খোলা না হয়ে রেজিষ্ট্রী হতে হবে কারণ ২০০৫ সালের পর হইতে বায়না কৃত সম্পত্তি বিক্রয়ে বিক্রেতাকে বাধ্য করতে হলে চুক্তি প্রবলের মোকদ্দমায় খোলা বায়নার কোন আইনগত মূল্য নেই। কেউ আম মোক্তারের অন্তরালে মূল্য পরিশোধ করলে সাথে একটি বায়নাপত্র থাকা দরকার। কারণ আম মোক্তারে কোন বিনিময় মূল্য নেই। তাছাড়া বিক্রেতা যে কোন সময় আমমোক্তারটি একতরফাভাবে বাতিল করে দিতে পারেন। কোন পক্ষের মৃত্যু জনিত কারণেও আমমোক্তার

বাতিল হয়ে যায়। আপনি যে দাগের সম্পত্তি খরিদ করবেন ম্যাপে সে দাগটি দেখে সরেজমিনে স্থানীয় সার্ভেয়ার দ্বারা পরিমাপ করে জমির সঠিক লোকেশন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। অনেক সময় মাঠে এক জমি দেখিয়ে দলিলে অন্য জমি বিক্রি করা হয় প্রয়োজনে পার্শ্বের প্লটের জমি মালিককে দলিলে স্বাক্ষী করে নিবেন। দলিলে উল্লেখিত চৌহুদ্দির সাথে সরেজমিনে চৌহুদ্দির মিল পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্লটের চৌহুদ্দি পার্শ্ববর্তী দাগের মাধ্যমে গোঁজামিল না দিয়া আশে পাশের ভোগদখলকার জমি মালিকদের নামের মাধ্যমে দিলে ভালো হয়। সর্বশেষ সাবধানতা সরূপ উক্ত সম্পত্তির উপর কোন দায়ভার আছে কিনা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস থেকে তল্লাশি দিয়ে Non-Incumbrance Certificate বা দায়মুক্ত সনদ নিতে পরেন তবে উক্তরূপ দায়মুক্ত সনদে প্রায়ই সাবরেজিস্টারগণ স্বাক্ষর না করে তল্লাশি কারক বা দলিল লেখকগণ স্বাক্ষর দিয়ে থাকেন এতে বিষয়টি আইনগত মর্যাদা লাভ করে না। খরিদপূর্ব ঐ সম্পত্তি বিষয়ে পত্র পত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশ দিয়ে স্থানীয়ভাবে তা বিভিন্ন জায়গায় সাটিয়ে দেওয়া যায়। এতে আইনে আত্মপক্ষ সমর্থনের একটা সুযোগ পাওয়া যায়। সম্পত্তিতে কাউকে আমমোক্তার দেয়া আছে কিনা জেনে নিতে হবে।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো ক্রেতা নিজে বা এ বিষয়ে কোন পেশাদার লোককে দিয়ে করতে পারেন। খরিদার পূর্বে কিছু দিনের জন্য সরেজমিনে আপনার নামে " বায়নাকৃত সম্পত্তি " মর্মে একটি সাইনবোর্ড প্রদর্শন করে রাখা যেতে পারে এতে করো আপত্তি থাকলে বিষয়টি জানা যাবে। লীজ হোল্ড প্রপার্টির ক্ষেত্রে সর্বশেষ লীজ গ্রহীতা বা লীজির নামে নামজারী ও সরেজমিন দখল এবং লীজ দাতার সাথে অফিসিয়াল ফাইল আপটুডেট কিনা পরীক্ষা করে অগ্রসর হতে হবে মনে রাখতে হবে লীজ হোল্ড প্রপার্টি প্রতিবার হস্তান্তরেই লীজ দাতার লিখিত অনুমতি লাগবে। এভাবে যাচাই বাছাই অন্তে জমি খরিদ করা গেলে আপনার জমি কিনে ক্ষতিগ্রস্থ বা প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।

মু. রিয়াজ উদ্দিন
B.S.S(Hons)(DU),M.S.S(DU),LL.B & Survey(Land)
এডভোকেট, জাজ কোর্ট, ঢাকা
মোবাইলঃ 01795175367

জমির মালিকানা যাচাই পদ্ধতি ও আইনী পরামর্শ || এডভোকেট মু. রিয়াজ উদ্দিন জমির মালিকানা যাচাই পদ্ধতি ও আইনী পরামর্শ || এডভোকেট মু. রিয়াজ উদ্দিন Reviewed by pencil71 on January 26, 2022 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.