সকাল ৬.৩০ মিনিট ছুটে চলছি নতুন গন্তব্যে। সাথে তাজুল ইসলাম ভাই। যান্ত্রিক ঢাকার পথ পাড়ি দিয়ে এগিয়ে চলছে মোটরসাইকেল। যেহেতু রবিবার তাই রাস্তায় যানজট একটু বেশি। রাস্তার পাশে বড় বড় কলকারখানা, গার্মেন্টস পেরিয়ে আমরা এগিয়ে চলছি। আমরা এসে পৌছলাম কাঙ্খিত গন্তব্যে। তাজুল ইসলাম ভাই মোটরসাইকেল থামালেন "সুজন সেন গুপ্ত" জমিদার বাড়ির একবারে সামনে।
যমুনা নদীর কূলঘেঁষে সবুজ-শ্যামল তেওতা গ্রামটিকে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে দিয়েছে শ্যামশংকর রায়ের প্রতিষ্ঠিত নবরত্ন মঠটি। এই তেওতা গ্রামটি আরও বিশিষ্ট হয়ে উঠেছে জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম ও স্ত্রী প্রমীলার স্মৃতি জড়িয়ে থাকায়। ডাক নাম দুলি।
১৯২২ সালে ব্রিটিশ সরকার নজরুলের বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। প্রমীলাকে নিয়ে তেওতা গ্রামে আত্নগোপন করেন নজরুল। দূরত্ব নজরুল ঘরের কোনে বসে থাকেননি। পাখিডাকা তেওতা গ্রামে ছুটে বেরিয়েছিল। গান, কবিতা আর অট্রহাসিতে পুরো গ্রামের মানুষকে আনন্দে মাতিয়াছিল।
জমিদার কিরণশস্কর রায়ের আমন্ত্রণে নজরুল তার অতিথি হয়ে আসেন। সে সময়ই নজরুল এবং প্রমীলার দেখা। জমিদার কিরণ শস্কর রায়ের স্নেহধন্য। দুলি তখন মাত্র কয়েক বছরের বালিকা। গানের ফাঁকে ফাঁকে নজরুল পান খেতেন। দুলির দায়িত্ব ছিল নজরুলের হাতে পান দেয়া। এর মাধ্যমেই নজরুল দুলির পরিচয় আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। নজরুল যখন "তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সেকি মোর অপরাধ " তখন লজ্জায় রক্তিম হতেন দুলি।
সুজন সেন গুপ্তের জমিদার বাড়িটি এখনো তার কাঠামোতে দাড়িয়ে আছে। খয়ে গেছে ইটের দেয়াল। বাড়ির সামনে বিশাল পুকুর এবং বহুতল মন্দির। বাড়িতে ঘুরছি হঠাৎ চোখে পড়লো দোতালায় ওঠার সিঁড়ি। ছাঁদ থেকে পুরোবাড়ির কাঠামো দেখতে পেলাম। উন্নতবিশ্বে যে সকল স্থাপনা হেরিটেজ হিসেবে সংরক্ষিত হয়, আমাদের দেশে সেই সকল স্থাপনা পড়ে থাকে অবহেলায়।
দুপুর ২টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে ফিরতি পথ যখন ঢাকার শহরের জ্যাম ঠেলে বাসায় পৌছলাম রাত তখন প্রায় ৮টা।
স্মৃতি ধন্য তেওতা জমিদার বাড়ি
Reviewed by pencil71
on
December 27, 2021
Rating:
No comments: