আব্বুর সাথে কাটানো শেষ স্মৃতিচারণ



আব্বুর সাথে কাটানো শেষ স্মৃতিচারণ


আমাদের পারিবারিক মসজিদের পাশেই আমাদের পারিবারিক কবরস্থান সেখানে আমার দাদি ,দাদা এবং বড়মা সবাই শুয়ে আছে , কিন্তু সব সময় কবরের পাশ দিয়ে কবরের সামনে দাঁড়ালেও কখনো কবরস্থান পরিষ্কার করার মতো মনোভাব তৈরি হয়নি। তখন ছিল ৯ নভেম্বর ২০২২ , এই দিন আমি কবরস্থানের পাশে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে চিন্তা করছি এবং ভাবছি যে দাদা দাদির কবরটা পরিষ্কার করে দিয়ে যাই। প্রথম আমি খুব যত্ন সহকারে সে কবরস্থান পরিষ্কার করি। ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, আব্বুর অনেক আগের থেকেই পা একটু সমস্যা ছিল ব্যথা ছিল খুব কোন ভাবেই ডাক্তারের কাছে যেতে চাইত না , সেদিন আমরা বাসার সবাই মিলে জোর করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই । এবং তার ব্যথার সমস্যা সমাধান হলেও তার চেয়ে অনেক আগে অ্যাজমা সমস্যা ছিল সেটা ডাক্তারের কাছে বলেনি। ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ আমি ঢাকায় চলে যাই আমার কাজে। ২৩ ডিসেম্বর সে আমার চাচার বাসায় থাকে রাতে সেখান থেকেই তার ঠান্ডা লাগে এবং হালকা জ্বর আসে , সে এতটাই মনোবল সম্পূর্ণ মানুষ ছিল যে ছিল যে সে হালকা ওষুধ খেয়ে 24 /25 ডিসেম্বর সে তার দুর্বল শরীর নিয়ে দোকান করছে। কিন্তু ২৬ ডিসেম্বর আর সম্ভব হয়নি তাকে আমরা আমাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায় আপু , মেজবা ভাই , সাহিন ভাই। ২৭ তারিখ সকালে আমি আম্মু মাদারীপুর ব্যাক করি কিন্তু মাদারীপুর আসার ১০ কি:মি: আগে আপু কল দিয়ে বলে যে আবার ঢাকায় ব্যাক করতে আব্বুকে ট্রান্সফার করে দিয়েছে। তাক্ষণিক আমরা আবার এম্বুলেন্স করে আব্বুকে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় ইবনে সিনা হসপিটালে যাই। হসপিটালের জরুরি বিভাগ থেকে বলা হয় তাকে আর্জেন্ট ICU life support দরকার আমরা এক মিনিটও দেরি করিনি । ৪ জানুয়ারি ২০২৩ শরীরের সমস্ত রোগ ভালো হওয়ায় তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেওয়া হয়। বিকালে যখন দেখতে যাই আব্বুকে খুব অস্থির মনে হচ্ছিল  অনেক কথা বলতে চাচ্ছিলাম কিন্তু আমি তাকে কথা বলতে দেইনি কারণ আমি চেয়েছি সে সুস্থ হওয়ার পরে তার সাথে কথা বলবো।
হঠাৎ করে পাশ থেকে নার্স তোকে জিজ্ঞেস করল এ আপনার কি হয় প্রতি উত্তর দিল আব্বু 
"এ আমার একমাত্র ছেলে জুবায়ের হোসেন হৃদয় " কথাটা শুনে মুখে যেন অনেক সুন্দর একটা হাসি হাসি ফুটেছিল আমার কিন্তু আমি তো বুঝতে পারিনি এটাই আমি শুনতে পাবো তার মুখের শেষ কথা ।
ডক্টর বলেছিল 5 তারিখ সকাল পর্যন্ত তাকে দেখাশুনা রাখা হবে যদি তাকে সুস্থ মনে করে এখনকার মত কন্ডিশনে থাকে তাহলে তাকে বেডে দেওয়া হবে। আমার ২২ বছর জীবনে এত খুশি হয়নি যতটা খুশি এই দিন হয়েছিলাম ডাক্তারের কথা শুনে। কে জানত আমার ভাগ্য খারাপ আর তার হায়াত শেষ ?  ২৭ ডিসেম্বর ২০২২ বিকাল থেকে ৬ জানুয়ারি ২০২৩ রাত ২:৪০ পর্যন্ত আব্বুর শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমি তার পাশেই ছিলাম। 
5 জানুয়ারি ২০২৩ আব্বুর  কন্ডিশন খারাপ দেখে এই রাতে এশার নামাজে আমি অনেক কেঁদেছি এবং আল্লাহর কাছে একটা কথাই বলছি আল্লাহ তুমি একটা ম্যাজিকের সব চেঞ্জ করে দাও কিন্তু আল্লাহ আমার কথা শুনেনি পরে রাতে ১২ টার পরে কিভাবে যে আমার চোখ লেগে গেল বুঝলাম না ডক্টর আমাকে না পেয়ে আমার বোনকে কল করে এবং বলে একজন লোক ICU তে পাঠাতে আপু আমাকে কল দিয়ে বলে তাড়াতাড়ি যা ডক্টর ডাকে এই ফোন পেয়ে আমার বোঝা হয়ে গেছিল এরা হয়তো খারাপ সংবাদ এখন আমি দৌড়ে গেলাম আর দেখলাম আব্বুর হার্টবিটের অবস্থা খুবই খারাপ। ডক্টর আমাকে বলল এই অবস্থায় রোগীকে ধরে রাখা খুবই কষ্ট আপনি তার কাছে বসে কিছু সূরা পড়েন , তখন ২ টা ৩০ এর মত বাজে আব্বুর অবস্থা খারাপই হচ্ছে তখন আমাকে ডক্টর বলল তার কানে কালেমা পড়ে ফুঁ দেন। তৎক্ষণাৎ আমি কালেমা পড়ে ফু দেওয়ার সাথে সাথে আব্বুর হার্টবিট চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
আমি দেখতে পাচ্ছিলাম আব্বুর হার্টবিট শেষ তাও ডক্টর আমাকে মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে ICU থেকে বের করে দিল। আমি আইসিও থেকে বের হয়ে মাটিতে বসে পড়ি তখন কিছুই ভাবতে পারছিলাম না শুধু আল্লাহকে বলতেছিলাম বারবার আল্লাহ তুমি কি পারো না এক জাদুতে সবকিছু পরিবর্তন করে দিতে আল্লাহ তুমি কি পারো না অলৌকিক কিছু ঘটাতে। তখনই ডক্টর বের হয়ে এসে বলল আপনি শক্ত হন এবং আপনার আব্বুর NID কার্ডটা দিন আমরা ডেট সার্টিফিকেট বানাবো এটা আপনার ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগবে। এটা শোনার পরে আমার এক মিনিটের জন্য মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙ্গে আমার মাথায় পড়েছে। কিছুই ভাবতে পারেনি কাউকে ফোন দিয়ে বলার মত সাহস ছিল না সেই মুহূর্তে আমি প্রথম কল করি আমার মামাকে দ্বিতীয় ফোন করি আমার চাচাতো ভাইকে এবং তৃতীয় ফোন করি আমার বড় চাচাকে এরপর কাউকে কল করার মত বা কথা বলার মত অবস্থায় ছিলাম না। আব্বুকে ফজরের পরে ঢাকা থেকে নিয়ে বের হই গোসল করানো হয় মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের পাশে। তারপর আমরা বারোটায় কালকিনিতে  প্রথম জানাজা করি যা টাইম ছিল ১১ঃ০০ টায় কিন্তু শেখ হাসিনা তার বাড়ি গোপালগঞ্জে যাওয়ার জন্য রাস্তা আটকে রেখেছিল তার জন্য আমাদের ১ ঘন্টা দেরি হয় ১২টায়  জানাজা শেষ করে গ্রামের বাড়ি এর পারিবারিক কবরস্থান আমার দাদা দাদির পাশে মানে তাকে দাদার পাশে কবর দেওয়া হয় বাড়িতে যানাযার টাইম ছিল আসর বাদ। 

আল্লাহ আব্বুকে  জান্নাত দান করুক।
আমিন।
আব্বুর সাথে কাটানো শেষ স্মৃতিচারণ আব্বুর সাথে কাটানো শেষ স্মৃতিচারণ Reviewed by pencil71 on January 30, 2023 Rating: 5

No comments:

Post a Comment

Powered by Blogger.