মুমিন কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না-০২।
*************************************
আল্লাহ্ তায়ালার ভয় তথা তাকওয়া, প্রকৃত ঈমান আর ডিপ্রেশন বা নিরাশা একই অন্তরে কোন ক্রমেই সহাবস্থান করতে পারে না।
যদি আপনার মনে বিন্দুমাত্র ডিপ্রেশন থাকে, তার মানে আপনার হৃদয়ে আল্লাহ্ ভীতি হ্রাস পেয়েছে এবং আপনার মস্তিষ্কে শয়তান চিন্তার বিকৃতি ঢুকিয়ে দিয়েছ।
আর শয়তানের কাজই হলো মানুষের চিন্তার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, মানুষকে পথভ্রষ্ট করা। পথভ্রষ্টতা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন মাজিদে ইরশাদ করেছেন -----
قَالُوا لَا تَوْجَلْ إِنَّا نُبَشِّرُكَ بِغُلٰمٍ عَلِيمٍ
قَالَ أَبَشَّرْتُمُونِى عَلٰىٓ أَن مَّسَّنِىَ الْكِبَرُ فَبِمَ تُبَشِّرُونَ قَالُوا بَشَّرْنٰكَ بِالْحَقِّ فَلَا تَكُن مِّنَ الْقٰنِطِي قَالَ وَمَن يَقْنَطُ مِن رَّحْمَةِ رَبِّهِۦٓ إِلَّا الضَّآلُّونَ
"তারা বলল,ভয় করবেন না,আমরা আপনাকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি।তিনি বললেন,তোমরা কি আমাকে সুসংবাদ দিচ্ছ আমি বৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও? তোমরা কিসের সুসংবাদ দিচ্ছ।
তারা বলল,আমরা সত্য সুসংবাদ দিচ্ছি; কাজেই আপনি হতাশ হবেন না। তিনি বললেন,‘যারা পথভ্রষ্ট তারা ছাড়া আর কে তার রবের অনুগ্রহ থেকে হতাশ হয়?
(সুরা হিজর আয়াতঃ- ৫৩---৫৬)
গান শোনা, মুভি দেখা, মোটিভেশনাল বই পড়া বা মানুষের সাথে আড্ডা দিয়েই যদি ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মিলত তবে গায়ক লিনকিন পার্ক আত্মহত্যা করলেন কেন? কিংবা অভিনেতা সুশান্ত শিং সুইসাইড করলেন কেন? মোটিভেশন গুরু ডেল কার্নেগি আত্মহত্যা করেছিলেন কেন?
যারা ডিপ্রেশনে পড়ে এবং আত্মহত্যা করে, মোটা দাগে দেখবেন,এরা অজ্ঞেয়বাদী নাহয় অবিশ্বাসী। কোনো মুসলিম যদি ডিপ্রেশনের শিকার হন, তাহলে আপনার ঈমান নিয়ে ভেবে দেখার সময় এসেছে।
এবার অনেকেই তেড়ে এসে বলবেন, আমার পরিস্থিতি আপনি বুঝবেন না। আমার ফ্যামিলি প্রবলেম, মানি প্রবলেম, স্বামী প্রবলেম.....আরে ভাই থামেন তো!!
কোন পরিস্থিতির গল্প শোনান আপনি? বউ ভালো না? হযরত লূত (আ) এর স্ত্রীও ভালো ছিলো না। হযরত আছিয়া (আঃ) এর স্বামী ছিলেন কে জানেন? ফেরাউন।
ফেরাউনকে ঈশ্বর না মানার অপরাধে তাঁকে টুকরো করে কেটে গরম তেলের মধ্যে ডোবানো হয়েছিল৷
আরও শুনবেন? চেষ্টা করেও কিছু হচ্ছে না তাই ডিপ্রেশন?
হযরত নুহ (আঃ) প্রায় নয়শ বছর দাওয়াত দিয়ে আশি জনকে মাত্র দাওয়াত কবুল করাতে পেরেছিলেন।
আপনজন আপনাকে কষ্ট দিয়েছে?অপবাদ দিয়েছে?গালি দিয়েছে?
ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরা তাকে কুয়ার মধ্যে ফেলে দিয়ে চলে গেলো। আজিজ মিশোরির বৌ জুলেখার সাথে ব্যভিচার না করায় উল্টো অপবাদ দিয়ে সাত বছরের জেল খাটালো!
এরপরও আপনি আমাকে কোন খারাপ পরিস্থিতির গল্প শোনাবেন?
হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম যখন বার্ধক্যে উপনীত, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে একদল ফেরেশতা এসে তখন তাঁকে এক জ্ঞানী পুত্রের সুসংবাদ শোনাল। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম জিজ্ঞেস করলেন- আমাকে তো বার্ধক্য পেয়ে বসেছে।,এরপরও তোমরা আমাকে এ সুসংবাদ দিচ্ছ?! কীসের ভিত্তিতে তোমরা এ সুসংবাদ দিচ্ছ? ফেরেশতারা বলল, আমরা তো সত্য কথাই বলছি। আপনাকে সত্য সুসংবাদই দিচ্ছি। বার্ধক্য আপনাকে স্পর্শ করেছে করুক।,এ বৃদ্ধ বয়সেই আপনার সন্তান হবে। আপনি নিরাশদের দলে যাবেন না। হযরত ইবরাহীম(আঃ) তাদের কথার জবাবে বললেন, পথভ্রষ্টরা ছাড়া আর কে আপন প্রতিপালকের রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে?
যে আয়াতে কারিমা আমরা প্রবন্ধের শুরুতেই উদ্ধৃত করেছি।
হযরত ইয়াকুব (আঃ)'র সর্বাধিক প্রিয় সন্তান ছিলেন হযরত ইউসুফ (আঃ) কিন্তু তাঁর ভাইয়েরা বাবার এই আদরকে সহজে মেনে নিতে পারেনি তাই কৌশলে তাঁকে একদিন বাবার কাছ থেকে নিয়ে গিয়ে কূপে ফেলে দিল।
আল্লাহর অসীম কুদরতে কূপ থেকে উঠে এসে একদিন তিনি মিশরের ধনভাণ্ডারের দায়িত্বশীল হলেন। আর যে ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে চক্রান্ত করেছিল, দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে তারা খাবার আনতে হাজির হলো তাঁর কাছে। এরপর এক কৌশলে তিনি তাঁর সহোদর বিন ইয়ামীনকে নিজের সঙ্গে রেখে দিলেন।
আল্লাহর রহমত থেকে ডিপ্রেসড হয়ে যাওয়া কবিরা গুনাহ।
বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)বলেন,রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেছেন, ‘হাবরু হাযিহিল উম্মাহ’-এই উম্মতের বিদ্বান ব্যক্তি। তিনি বলেছেন, ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহ তাআলার সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর পাকড়াও থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে যাওয়া আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়া'৷
(মুসান্নাফে আঃ রাযযাক,হাদীস-১৯৭০১)
আর মনে রাখতে হবে গান বাজনা বা মুভি, বই আপনাকে ডিপ্রেশন থেকে কোন ক্রমেই মুক্তি দিতে পারবে না। ডিপ্রেশনের একমাত্র চিকিৎসা হলো আল্লাহর দিকে ফেরত আসা। আপনার শয়তান যখন আপনাকে বলছে তোর অনেক কষ্ট, তোর চেয়ে কষ্টে কেউ নাই।আর তখনই আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন--
إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
"কষ্টের সঙ্গেই তো স্বস্তি আছে। অবশ্যই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে৷"
(সূরা আলাম নাশরাহ আয়াতঃ-৫-৬)
অবএব,আসুন হতাশা-নিরাশা হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহর রহমতের প্রতি ভরসা রাখি এবং আমাদের ঈমান ও আমল সুন্দর জরি,দৃঢ় করি।আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।আমীন।।(চলবে)
শরীফ আবদুল কাদের তারিখঃ২৪/১০/২০২১ইং।
মুমিন কখনো আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হতে পারে না || pencil71
Reviewed by pencil71
on
October 24, 2021
Rating:

No comments: